শাকসবজি সংরক্ষণ মূলত চার প্রকার। যথা-
১) টাটকা অবস্থায় সংরক্ষণ : শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নিম্ন
তাপমাত্রা ও উচ্চআর্দ্রতায় রাখা যায়। এতে সবজির স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান
প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। তবে এটা খুব ব্যয়বহুল ও হিমাগারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত
নেই। যেমন- টমেটো, আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, মটরশুঁটি ইত্যাদি হিমাগারে
সংরক্ষণ করা যায়।
২) শুকিয়ে সংরক্ষণ : সতেজ ও
রসাল হওয়ার কারণে শাকসবজিতে দ্রুত পচন ধরে। তাই শুকিয়ে শাকসবজিতে পানির
পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলে এগুলো সহজে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় না ও
দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- সজিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, বিলাতি ধনিয়া,
মাশরুম, শিমের বিচি ইত্যাদি ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে অসময়ে চাহিদা
মেটানো সম্ভব। পাকা শিমের বিচি ও বরবটির বিচি শুকিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করা
যায়। শিমের বিচি ভেজে খাওয়া যায় ও ভেজে গুঁড়া করে ডাল হিসেবেও রান্না করে
খাওয়া যায়। পটোলের পাতা দিয়ে বড়া, স্যুপ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পটোলের
পাতা ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিধায় শুকিয়ে গুঁড়া করে সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়া
যায়।
৩) ব্ল্যানচিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ :
প্রায় সব সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মুলা, আলু, মিষ্টিআলু
ইত্যাদিকে ছোট করে কেটে ব্ল্যানচিং করে রেখে প্রায় ৩-৫ মাস সংরক্ষণ করা
যায়। ব্ল্যানচিং হলো একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে তার মধ্যে কাটা সবজি ৩-৪
মিনিটের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। তারপর আধাসিদ্ধ সবজিগুলো ছাঁকনিতে ঢেলে পানি
ঝরিয়ে এবং পরে তাতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করে সম্পূর্ণ পানি ঝরিয়ে অন্য
একটি পাত্রে ঢালতে হবে। সবজিগুলো সম্পূর্ণভাবে ঠাণ্ডা হলে বায়ুরোধক পাত্রে
ভরে ডিপফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায় অথবা ব্ল্যানচিং করা সবজিগুলো সূর্যের আলোতে
শুকিয়ে ও বায়ুরোধক পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়।
৪) প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ :
প্রক্রিয়াজাত করেও শাকসবজি সংরক্ষণের বহু পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
প্রক্রিয়াজাত করার দরুন শাকসবজির মূল গঠন পরিবর্তিত হয় এবং পচন থেকে রক্ষা
করার জন্য কোনো না কোনো মাধ্যম বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয়।
শাকসবজি প্রক্রিয়াজাত করে দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে
প্রক্রিয়াজাত করে এটি একটি ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠায় এবং গ্রামীণ
দারিদ্র্য বিমোচন তথা আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সংরক্ষণের কয়েকটি মাধ্যম সম্পর্কে সংক্ষেপে
আলোকপাত করা হলো।
ক. চিপস : আলু ও কাঁচাকলা ও মাশরুম ইত্যাদি
সবজিকে পাতলা স্লা্ইস করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা যায়। যা দিয়ে
মুখরোচক খাবার তৈরি করে বাচ্চাদের আকৃষ্ট করা যায় এবং সারা বছর এর প্রাপ্তি
নিশ্চিত করা সম্ভব।
খ. চিনি ও লবণের দ্রবণে শাকসবজি সংরক্ষণ : ক্যাপসিকাম, মাশরুম, কচি শসা ইত্যাদি চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ করা যায়।
গ. রস আকারে সংরক্ষণ : টমেটোর রস তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়।
ঘ. জ্যাম, জেলি : চুকুর, আলু, মিষ্টিআলু, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদির জ্যাম জেলি তৈরি করা যায়।
ঙ. আচার, সস, চাটনি : বেগুন, টমেটো ইত্যাদির আচার, সস, চাটনি করা যায়।
অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বেগুনের আচার করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।
টমেটোর সস সর্বজন স্বীকৃত ও বহুল প্রচলিত, যা অনেক দিন সংরক্ষণ রাখা যায়।
চ. মোরব্বা : চালকুমড়া, পেঁপে ইত্যাদির মোরব্বা করা যায়।
ছ. বিভিন্ন ডাল ও মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বড়ি বানিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।
বিভিন্ন শাকসবজি সংরক্ষণ কৌশল
মিষ্টিকুমড়া :
১০০-১২০ দিনের পাকা মিষ্টিকুমড়া সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া ও পাকা
মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বড়ি তৈরি করে ও ভালোভাবে শুকিয়েও অসময়ের পুষ্টি চাহিদা
মেটানোর জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
চালকুমড়া :
এটি রবি ও খরিপ দুমৌসুমেই মাচা, চালা ও ভূমিতে জন্মে। পাকা চালকুমড়া
বাড়িতে কয়েক মাস বা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। চালকুমড়ার বোঁটার কাটা
মাথায় মোম লাগিয়ে সংরক্ষণ মেয়াদ আরও বাড়ানো যায়। পাকা চালকুমড়া দিয়ে
মোরব্বা তৈরি করে রেখেও অসময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
উপায়ে ও নিরাপদ পানি ব্যবহার করে এসব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে পুষ্টিমান বজায়
থাকবে।
বাঁধাকপি :
সাধারণত হিমায়িত গুদামে ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া শীতকালে
সাধারণ তাপমাত্রায় বাতাস চলাচল উপযোগী ছায়াযুক্ত স্থানে প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ
সংরক্ষণ করা যায়।
ফুলকপি : জমি
থেকে ফসল তোলার প্রায় ৭ দিন আগে নেপথালিন অ্যাসেটিক এসিড পাতায় ছিটিয়ে পরে
ঠাণ্ডা স্থানে রাখলে প্রায় এক থেকে দেড় মাস ফুলকপি ভালো অবস্থায় থাকে।
টমেটো :
মৌসুমে সংরক্ষণের সময় পাকা টমেটো মেঝেতে খড় বিছিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। অনেক
সময় খাঁচায় খড় বিছিয়ে টমেটো ঢেকে রাখা যায়। এভাবে স্থানীয় জাতের ক্ষেত্রে
৫-৭ সপ্তাহ ও হাইব্রিড জাতের টমেটোর ক্ষেত্রে ২০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা
যায়। এ ছাড়াও টমেটো দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত সস, চাটনি করে সারা বছর সংরক্ষণ
করা যায়। আর তাজা টমেটো হিমাগারে রেখেও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। অসময়ে
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ও চাহিদা মেটানো সম্ভব।
কুমড়াজাতীয় সবজি : বারোমাসী জাত রোপণ করে অসময়ে বিভিন্ন কুমড়াজাতীয় সবজি পাওয়া যায়।
উত্তর সমূহ
শাকসবজি সংরক্ষণ মূলত চার প্রকার। যথা- ১) টাটকা অবস্থায় সংরক্ষণ : শাকসবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নিম্ন তাপমাত্রা ও উচ্চআর্দ্রতায় রাখা যায়। এতে সবজির স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। তবে এটা খুব ব্যয়বহুল ও হিমাগারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নেই। যেমন- টমেটো, আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, মটরশুঁটি ইত্যাদি হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায়। ২) শুকিয়ে সংরক্ষণ : সতেজ ও রসাল হওয়ার কারণে শাকসবজিতে দ্রুত পচন ধরে। তাই শুকিয়ে শাকসবজিতে পানির পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলে এগুলো সহজে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় না ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। যেমন- সজিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, বিলাতি ধনিয়া, মাশরুম, শিমের বিচি ইত্যাদি ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে অসময়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব। পাকা শিমের বিচি ও বরবটির বিচি শুকিয়ে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। শিমের বিচি ভেজে খাওয়া যায় ও ভেজে গুঁড়া করে ডাল হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। পটোলের পাতা দিয়ে বড়া, স্যুপ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পটোলের পাতা ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিধায় শুকিয়ে গুঁড়া করে সারা বছর সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়। ৩) ব্ল্যানচিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ : প্রায় সব সবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মুলা, আলু, মিষ্টিআলু ইত্যাদিকে ছোট করে কেটে ব্ল্যানচিং করে রেখে প্রায় ৩-৫ মাস সংরক্ষণ করা যায়। ব্ল্যানচিং হলো একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে তার মধ্যে কাটা সবজি ৩-৪ মিনিটের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। তারপর আধাসিদ্ধ সবজিগুলো ছাঁকনিতে ঢেলে পানি ঝরিয়ে এবং পরে তাতে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করে সম্পূর্ণ পানি ঝরিয়ে অন্য একটি পাত্রে ঢালতে হবে। সবজিগুলো সম্পূর্ণভাবে ঠাণ্ডা হলে বায়ুরোধক পাত্রে ভরে ডিপফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায় অথবা ব্ল্যানচিং করা সবজিগুলো সূর্যের আলোতে শুকিয়ে ও বায়ুরোধক পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়। ৪) প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ : প্রক্রিয়াজাত করেও শাকসবজি সংরক্ষণের বহু পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রক্রিয়াজাত করার দরুন শাকসবজির মূল গঠন পরিবর্তিত হয় এবং পচন থেকে রক্ষা করার জন্য কোনো না কোনো মাধ্যম বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয়। শাকসবজি প্রক্রিয়াজাত করে দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রক্রিয়াজাত করে এটি একটি ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠায় এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন তথা আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সংরক্ষণের কয়েকটি মাধ্যম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো। ক. চিপস : আলু ও কাঁচাকলা ও মাশরুম ইত্যাদি সবজিকে পাতলা স্লা্ইস করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করা যায়। যা দিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরি করে বাচ্চাদের আকৃষ্ট করা যায় এবং সারা বছর এর প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। খ. চিনি ও লবণের দ্রবণে শাকসবজি সংরক্ষণ : ক্যাপসিকাম, মাশরুম, কচি শসা ইত্যাদি চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ করা যায়। গ. রস আকারে সংরক্ষণ : টমেটোর রস তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। ঘ. জ্যাম, জেলি : চুকুর, আলু, মিষ্টিআলু, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদির জ্যাম জেলি তৈরি করা যায়। ঙ. আচার, সস, চাটনি : বেগুন, টমেটো ইত্যাদির আচার, সস, চাটনি করা যায়। অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বেগুনের আচার করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। টমেটোর সস সর্বজন স্বীকৃত ও বহুল প্রচলিত, যা অনেক দিন সংরক্ষণ রাখা যায়। চ. মোরব্বা : চালকুমড়া, পেঁপে ইত্যাদির মোরব্বা করা যায়। ছ. বিভিন্ন ডাল ও মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বড়ি বানিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। বিভিন্ন শাকসবজি সংরক্ষণ কৌশল মিষ্টিকুমড়া : ১০০-১২০ দিনের পাকা মিষ্টিকুমড়া সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া ও পাকা মিষ্টিকুমড়া দিয়ে বড়ি তৈরি করে ও ভালোভাবে শুকিয়েও অসময়ের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য সংরক্ষণ করা যায়। চালকুমড়া : এটি রবি ও খরিপ দুমৌসুমেই মাচা, চালা ও ভূমিতে জন্মে। পাকা চালকুমড়া বাড়িতে কয়েক মাস বা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। চালকুমড়ার বোঁটার কাটা মাথায় মোম লাগিয়ে সংরক্ষণ মেয়াদ আরও বাড়ানো যায়। পাকা চালকুমড়া দিয়ে মোরব্বা তৈরি করে রেখেও অসময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন উপায়ে ও নিরাপদ পানি ব্যবহার করে এসব পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে পুষ্টিমান বজায় থাকবে। বাঁধাকপি : সাধারণত হিমায়িত গুদামে ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়া শীতকালে সাধারণ তাপমাত্রায় বাতাস চলাচল উপযোগী ছায়াযুক্ত স্থানে প্রায় ৩-৪ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। ফুলকপি : জমি থেকে ফসল তোলার প্রায় ৭ দিন আগে নেপথালিন অ্যাসেটিক এসিড পাতায় ছিটিয়ে পরে ঠাণ্ডা স্থানে রাখলে প্রায় এক থেকে দেড় মাস ফুলকপি ভালো অবস্থায় থাকে। টমেটো : মৌসুমে সংরক্ষণের সময় পাকা টমেটো মেঝেতে খড় বিছিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। অনেক সময় খাঁচায় খড় বিছিয়ে টমেটো ঢেকে রাখা যায়। এভাবে স্থানীয় জাতের ক্ষেত্রে ৫-৭ সপ্তাহ ও হাইব্রিড জাতের টমেটোর ক্ষেত্রে ২০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ ছাড়াও টমেটো দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকৃত সস, চাটনি করে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। আর তাজা টমেটো হিমাগারে রেখেও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। অসময়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ও চাহিদা মেটানো সম্ভব। কুমড়াজাতীয় সবজি : বারোমাসী জাত রোপণ করে অসময়ে বিভিন্ন কুমড়াজাতীয় সবজি পাওয়া যায়।